•• আপনাদেরকে আমার ছোট্ট সাইটে স্বাগতম । আশা করি সাইটের পোস্ট গুলো ভালো লাগবে ••
সাথে থাকুন ..!.. ভালো থাকুন ('-')
Tuesday, October 21, 2014
গণিতের রাজ্যে মৌলিক সংখ্যা
আমরা জানি যে সংখ্যাগুলো ১ ও ওই সংখ্যা ছাড়া অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ শূন্য হয় না তাদের বলে মৌলিক সংখ্যা। যেমন ২, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩, ১৭, ১৯...। বাকি সংখ্যারা যৌগিক সংখ্যা নামে পরিচিত। যেমন: ৪, ৬, ৮, ১০, ১৫...। এখানে বলে রাখা ভালো ১ সংখ্যাটি মৌলিকও নয়, আবার যৌগিকও নয়।
মৌলিক সংখ্যার যে সমস্যা বা উপপাদ্যগুলো বিখ্যাত তাদের মধ্যে যেটি শুরুতেই আসে সেটি হলো মৌলিক সংখ্যার অসীমতা। অর্থাৎ মৌলিক সংখ্যার শেষ নেই! অনেক আগেই গণিতবিদ ইউক্লিড প্রমাণ করে দিয়ে গেছেন মৌলিক সংখ্যারা সংখ্যায় অসীম। প্রমাণটি খুবই সুন্দর। ধরা যাক, মৌলিক সংখ্যার পরিমাণ সসীম এবং সবচেয়ে বড় মৌলিক সংখ্যাটি P। N হলো সব মৌলিক সংখ্যার গুণফলের পরবর্তী সংখ্যা। অর্থাৎ N=(1x3x5x9x11 ...xP)+1। এখন মজার ব্যাপার হলো N নিজে কিন্তু ১ ও N ছাড়া অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে নিঃশেষে ভাগ যাবে না। অর্থাৎ N নিজেই একটি মৌলিক সংখ্যা। এখান থেকেই বোঝা যাচ্ছে মৌলিক সংখ্যার শেষ নেই।
এবার চলুন অসমাধিত সমস্যাগুলো দেখি। প্রথমেই আসে টুইন প্রাইমের কথা। মৌলিক সংখ্যার দিকে তাকান (৫, ৭); (১১, ১৩); (১৭, ১৯); (২৭, ২৯) এ রকম অনেক মৌলিক সংখ্যা ক্রমজোড় পাবেন, যেখানে মৌলিক সংখ্যা দুটির মধ্যে পার্থক্য ২। এদের বলে টুইন প্রাইম। এখন প্রশ্ন হলো, টুইন প্রাইমের সংখ্যাও কি অসীম। এর উত্তর জানা নেই, তবে ধারণা করা হয় যে সংখ্যাটি আসলেই অসীম।
এটি আজও রহস্য এবং এই রহস্যের নাম টুইন প্রাইম কনজেকচার। এটিকে একটু সাজিয়ে ১৮৪৯ সালে ডি পলিগনেক লিখেন যে, প্রতিটি স্বাভাবিক সংখ্যা k-এর জন্য অসংখ্য মৌলিক জোড়া p ও p র্ আছে, যেখানে pর্ - p=2k। এখানে k=1 হলেই এটি টুইন প্রাইম কনজেকচার।
টুইন প্রাইম থেকেই এসেছে বিচ্ছিন্ন বা আইসোলেটেড মৌলিক সংখ্যার ধারণা। যখন p মৌলিক, কিন্তু (p+2) ও (p-2) কোনোটাই মৌলিক নয়, তখন p কে বলা হয় বিচ্ছিন্ন মৌলিক সংখ্যা। যেমন ২৩ একটি বিচ্ছিন্ন মৌলিক, কারণ ২১ ও ২৫ কোনোটাই মৌলিক নয়।
টুইন প্রাইমের পরেই আসে প্রাইম ট্রিপলেটের কথা। (p, p+2, p+6) বা (p, p+4, p+6) এ রকম পর পর তিনটি মৌলিক সংখ্যাকে বলে প্রাইম ট্রিপলেট। যেমন: (৫, ৭, ১১); (৬৭, ৭১, ৭৩); (৮৭৭, ৮৮১, ৮৮৩)। প্রাইম কোয়াড্রপলেট হয় যখন পর পর চারটি মৌলিক সংখ্যা (p, p+2, p+6, p+8) অবস্থায় থাকে। যেমন: (১৯১, ১৯৩, ১৯৭, ১৯৯); (২০৮১, ২০৮৩, ২০৮৭, ২০৮৯)। আবার যখন (p, p+2, p+6, p+8) এই চারটি মৌলিক সংখ্যার সঙ্গে (p-4) এবং (p+12) এর যেকোনো একটি মৌলিক হয় তখন তাকে বলে প্রাইম কোয়ান্টোপ্লেট। আর যদি (p-4) ও (p+12) উভয়ই মৌলিক হয় তা হলে তাকে প্রাইম সেক্সটুপ্লেট বলে।
এই প্রাইম ট্রিপলেট, প্রাইম কোয়াড্রপ্লেট, প্রাইম কোয়ান্টোপ্লেট ও প্রাইম সেক্সটুপ্লেট—কারও ক্ষেত্রেই এটা নিশ্চিত না যে এদের সংখ্যা সসীম বা অসীম। টুইন প্রাইমের সংখ্যার মতোই এদের সংখ্যাটাও একটা রহস্য। আবার টুইন প্রাইম কনজেকচারের সমাধান মিললেই যে প্রাইম ট্রিপলেট কনজেকচারের সমাধান মিলবে, এমনটা নয়। আবার প্রাইম ট্রিপলেটের সমাধান মিললেই যে প্রাইম কোয়াড্রপ্লেটের সমাধান মিলবে, এমনটা নয়। একই কথা বাকিগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
এবার চটজলদি একটা উত্তর দিন তো—একটি প্রাইম সেক্সটুপ্লেটে মোট কয়টি প্রাইম টুইন, প্রাইম ট্রিপলেট, প্রাইম কোয়াড্রপ্লেট, প্রাইম কোয়ান্টোপ্লেট আছে?
দুই গণিতবিদের দুই প্রাইম
মারজেন এবং সোফি জার্মেন দুজনই বিখ্যাত গণিতবিদ। তাঁদের নামে মৌলিক সংখ্যার প্রচলনও রয়েছে। যেমন: 2p-1 আকারের মৌলিক সংখ্যাগুলো মারজেন প্রাইম নামে পরিচিত। এটা ইতিমধ্যেই জানা যে 2p-1 মৌলিক হলে pও মৌলিক হবে। অন্যদিকে, p ও 2p+1 উভয়ই যদি মৌলিক হয় তা হলে p-কে বলা হয় সোফি জার্মেন প্রাইম আর 2p+1 কে বলে সেইফ প্রাইম। যেমন 2×23+1=47, এখানে ২৩ হলো সোফি জার্মেন প্রাইম এবং ৪৭ হলো সেইফ প্রাইম। এই তিন ধরনের মৌলিক সংখ্যার মধ্যে দারুণ একটি সম্পর্ক রয়েছে: যদি সোফি জার্মেন প্রাইম p3(mod 4) হয় তা হলে এর সংশ্লিষ্ট সেইফ প্রাইম 2p+1, মারজেন প্রাইম 2p-1 এর গুণনীয়ক হবে। এই তিন ধরনের মৌলিক সংখ্যাই কেন অসীম সেটা কিন্তু একটা বিরাট রহস্য।
গাণিতিক রূপ দিয়ে প্রকাশ করা হয় এ রকম আরেক ধরনের মৌলিক সংখ্যা হলো কালেন প্রাইম। এর গাণিতিক প্রকাশ n.2n+1। ১৯০৫ সালে গণিতবিদ জেমস কালেন এটি আবিষ্কার করেন। এটিও অজানা, কালেন প্রাইম সসীম না অসীম এবং কেন?
সৌন্দর্যের মৌলিক
ফিবোনাচ্চি ধারাকে বলা হয় প্রকৃতির সৌন্দর্যের ধারা। প্রকৃতির সঙ্গে যেন নানাভাবে মিশে আছে এ ধারা। ধারাটি তাই খুব বিখ্যাত—১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫, ৮৯... এ ধারার অন্তর্ভুক্ত মৌলিক সংখ্যাগুলো তাই ফিবোনাচ্চি মৌলিক নামে পরিচিত। যেমন—২, ৩, ৫, ১৩, ৮৯... ইত্যাদি।
অন্যদিকে টামটা বা পেলিনড্রমিক ধাঁচের মৌলিক সংখ্যাকে বলে পেলিনড্রমিক প্রাইম। যেমন: ২, ৩, ৫, ৭, ১১, ১০১, ১৩১... এই মৌলিক সংখ্যার অঙ্কগুলো উল্টেপাল্টে লিখলেও একই থাকে। উল্লেখ্য, দুই অঙ্কের প্রথম ও একমাত্র পেলিনড্রমিক প্রাইম হলো ১১। এটি আমাদের জানিয়ে দেয় যে ১১ ছাড়া আর কোনো জোড় অঙ্কের পেলিনড্রমিক প্রাইম নেই। কারণ জোড় অঙ্কের সব পেলিনড্রমিক সংখ্যা ১১ দ্বারা বিভাজ্য।
এই যে সৌন্দর্যের মৌলিক সংখ্যা—ফিবোনাচ্চি ও পেলিনড্রমিক প্রাইম—এদের সংখ্যা সসীম, না অসীম এটা এখনো সমাধান হয়নি। এরা নিজ নিজ নামের কনজেকচার নামে পরিচিত।
ফার্মার সংখ্যা
সংখ্যাতত্ত্বে ফার্মার সংখ্যা খুবই বিখ্যাত। 22n+1 আকারের সংখ্যাগুলোকে বলে ফার্মার সংখ্যা। যেমন: ৩, ৫, ১৭, ২৫৭, ... তো দেখা গেছে n=4 পর্যন্ত ফার্মার সংখ্যা মৌলিক, n>4 এর পরে যৌগিক। কিন্তু এরপর সব n-এর জন্য কি যৌগিক, সেটা একটা রহস্য। এ রকম আরেকটি রহস্য ওয়াইফেরিচ প্রাইম। এটি ফার্মার লিটল থিওরেমের মতোই। ফার্মার লিটল থিওরেম হলো সব বিজোড় মৌলিক p, 2p-1-1 কে নিঃশেষে ভাগ করে। আর ওয়াইফেরিচ প্রাইম হলো p এমন একটি মৌলিক সংখ্যা যেন 2p-1-1, p2 দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য হয়। আরেক ধরনের মৌলিক সংখ্যা উইলসন মৌলিক। p একটি মৌলিক সংখ্যা যেন (p-1)!+1, p2 দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য। এ দুই ধরনের মৌলিক সংখ্যার সংখ্যা নিয়ে সমস্যা রয়ে গেছে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment