‘আমাদের অবস্থানের মানচিত্র মস্তিষ্ক কীভাবে তৈরি করে এবং কীভাবে আমরা একটি জটিল পরিবেশের মধ্য দিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন করি?’—দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা শত শত বছর ধরে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন।
ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত মার্কিন বিজ্ঞানী জন ও’কিফ এবং নরওয়ের দুই গবেষক এডভার্ড মসার ও মে-ব্রিট সেই রহস্যের সমাধান দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট। মস্তিষ্ক কেমন করে সঠিক পথে পরিচালিত হয়, নানা রকমের কাজ করে আর খুঁটিনাটি যাবতীয় তথ্য মনে রাখে—সেই পদ্ধতি আবিষ্কার করে ওই তিন বিজ্ঞানী এ বছর চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ এবং স্মৃতিভ্রংশ (আলঝেইমার) রোগের কারণে কীভাবে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যপদ্ধতি ব্যাহত হয়, সেই রহস্যের সূত্রও রয়েছে তাঁদের গবেষণায়।
ক্যারোলিনস্কার স্নায়ুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং নোবেল কমিটির সদস্য ওলে কিয়েন বলেন, ‘ওই তিন বিজ্ঞানী মস্তিষ্কের “একটি অভ্যন্তরীণ জিপিএস” খুঁজে পেয়েছেন, যার মাধ্যমে জানা সম্ভব হয় আমরা কোথায় আছি এবং যাওয়ার পথই বা কোনটি।’
জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম হচ্ছে স্থান-কাল-পাত্র-আবহাওয়া প্রভৃতি তথ্যসহ কোনো বস্তু বা ব্যক্তির অবস্থান নির্ণয়ের কাজে বহুল ব্যবহৃত একটি আধুনিক প্রযুক্তি। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) গবেষক ও’কিফ ১৯৭১ সালে প্রথম খুঁজে পান অবস্থান নির্ণয়ে সহায়ক মস্তিষ্কের নিজস্ব একটি উপাদান। ইউসিএলের আরেক গবেষক ইউটা ফ্রিথ বলেন, ও’কিফ দেখিয়েছেন মানুষের মনেরও নিজস্ব মানচিত্র-ব্যবস্থা থাকতে পারে। এতে মস্তিষ্ক এবং মনের ব্যাপারে গবেষণায় নতুন সম্ভাবনার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
নরওয়েজিয়ান দম্পতি এডভার্ড মসার ও মে-ব্রিট নিজেদের দেশের ট্রন্ডহিমে অবস্থিত একটি প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করেন। তাঁরা মস্তিষ্কের স্মৃতি সংরক্ষক অংশ হিপোক্যাম্পাসে স্নায়ুকোষের কার্যক্রম নিয়ে গবেষণা করতে ১৯৯৬ সালে ও’কিফের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করেন। এক দশকের প্রচেষ্টায় তাঁরা মস্তিষ্ককে সঠিকভাবে পরিচালনাকারী বিশেষ কোষ ‘গ্রিড সেল’ আবিষ্কার করতে সমর্থ হন। তাঁরা দাবি করছেন, সম্মিলিত কতগুলো কোষ এই গ্রিড সেলের সাহায্যেই একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত থেকে ত্রিমাত্রিক পরিবেশে নিজ অবস্থান নির্ণয় করে এবং মাথায় গেঁথে নেয় ওই স্থানের সমস্ত স্মৃতি।
মসার, মে-ব্রিট এবং ও’কিফের এই আবিষ্কারের ফলে মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা-গবেষণায় অগ্রগতি হবে বলে মনে করছেন গবেষকেরা।
সূত্র: রয়টার্স
No comments:
Post a Comment